শিলং ভ্রমণ: মেঘের দেশ মেঘালয়ের পাহাড় ও ঝরনার গল্প

পাইন অরণ্য, জলপ্রপাত এবং পার্বত্য জলধারায় ঘেরা শিলংয়ের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে ব্রিটিশরা এর নাম দিয়েছিলো “প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড”। এটি হচ্ছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী। প্রতি বছর শিলংয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার পর্যটক এখানে পারি জমায়।  আমাদের দেশের সিলেটের জাফলং কিংবা বিছানাকান্দি থেকে সীমান্তের ওপারে বড় বড় পাহাড় ও ঝর্ণা দেখে স্বাভাবিকভাবেই ইচ্ছে হয় যদি ওখানে যেতে পারতাম! কিন্তু একটা সীমার পর আপনাকে আর যেতে দিবেনা । দেশের এত কাছেই ওপারে যে এত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে না গেলে অজানাই থেকে যেত!

বাংলাদেশ থেকে শিলং ভ্রমনের জন্য সবচেয়ে সহজ পোর্ট হল সিলেটের তামাবিল সীমান্তের ডাউকী বর্ডার।
সেই চিন্তা থেকে ভিসায় পোর্ট হিসেবে ডাউকী দিয়ে আবেদন করি। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরন করে উত্তরা IVAC সেন্টারে জমা দিয়ে ৭ দিন পর ভিসা সহ পাসপোর্ট নিয়ে আসি। তো ঘটনাক্রমে সেই সময় শিলং যাবার সিদ্বান্ত বাদ দিয়ে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে কোলকাতা যাবার সিদ্বান্ত নেই। উল্লেক্ষ্য বর্তমানে বেনাপোল (হরিদাশপুর), গেদে (রেল) ও বাই এয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত। সেই হিসেবে ডাউকী পোর্ট দিয়ে ভিসা করেও এই সুযোগে বেমাপোল দিয়ে কোলকাতা ঘুরে আসি।  যা ছিল দেশের বাহিরে আমার প্রথম ভ্রমন।  যেটা ছিল ২০১৭ সালের ঘটনা।

এবার আসি মূল ভ্রমণ কাহিনিতে। শিলং এর গল্প। ২০১৮ তে এসে হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম আমার ভারতের ভিসার মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চলেছে। ব্যস্ত জীবনে ভ্রমনের জন্য টানা কয়দিন সময় ম্যানেজ করা একটু কঠিনই বটে। এদিকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর অপেক্ষমান। এই উপলক্ষে ফ্রী কয়দিন সময় পাওয়া যাবে আর এটাই হল মোক্ষম সুযোগ। যেই চিন্তা সেই প্লান। আমি ও সাথের  ২ জন বন্ধু মিলে ঈদের দুই দিন আগে অবশেষে পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেললাম। এর পর থেকে মাথায় শুধু শিলং আর শিলং। অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছিল। গতবছর আমাদের সাথে ভিসা করিয়েছিল এমন আরো দুইজন কে ফোনে অফার দিলাম। জানতে পারলাম অই দুইজন অন্য দুই গ্রুপের সাথে পরিকল্পনা অনেকটা ফাইনাল করে ফেলেছে। অবশেষে ওই দুই গ্রুপ আমাদের সাথে একত্রে যাওয়ার সিদ্বান্ত নিল। তখন আমরা হয়ে গেলাম ৯ জন। গ্রুপ মেম্বার বেশি হওয়ায় একটু সুবিধেই হলো। কম খরচে ঘুরে আসা যাবে।

এদিকে ঈদের আগের টুকটাক কেনাকাটা শেষ করে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ি চলে গেলাম। ঈদের পরের দিন গাজীপুর এসে ব্যাকপ্যাক রেডি করে রাত ১০ টা ৩০ এর বাসে গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে এনা পরিবহনে করে রওনা দিলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে। খুব ভোরে আমরা পৌছে গেলাম সিলেট বাসস্টেশন। সেখানে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে তামাবিল বর্ডারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লোকাল বাসে উঠে পড়লাম।

আমরা ৯ জনের কেউই ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে যাইনি। ফলে তামাবিল সীমান্ত থেকে ১৫ কিলো আগে জৈন্তাপুর বাজারে সোনালি ব্যাংকের শাখায় চলে যাই। জৈন্তাপুর বাজার পৌছে গিয়েছিলাম সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে। সেখানে পৌছে নাস্তা সেরে নেই। খোজ নিয়ে জানলাম ব্যাংক খুলবে সকাল ১০ টায়। তাও আশা করি বাজার থেকে সামান্য ভেতরে সোনালি ব্যাংকে চলে যাই। (স্থানীয়দের বললে দেখিয়ে দিবে)। গিয়ে দেখি গেট বন্ধ। নক করার পর ভেতর থেকে ব্যাংকের কোন কর্মচারি এসে জানাল ১০ টায় খুলবে। আমরা অনুরোধ করলাম আগের সুযোগ থাকলে আমাদের কাজটা করে দেওয়ার জন্য। কিসুক্ষন পর ৯ টা ৩০ এ সে আমাদের যেতে বল্লো। ফোন করে ব্যাংকের ম্যানেজার কে নিয়ে আসলো। ম্যানেজার খুব আন্তরিক ছিল। দ্রুত আমাদের কাজটা করে দিল।

Tour-Group gazipur
Sonali Bank Jaintapur Bazar
Tamabil Immigration

এরপর ৯ টা ৩০ এর দিকে কাজ সেরে লেগুনা দিয়ে তামাবিল ডাউকী বর্ডারের দিকে চলে গেলাম।  গিয়ে দেখি ৪০-৫০ জনের লাইন। ইমিগ্রেশন অফিস থেকে সবাই ফরম নিয়ে এসে পূরণ করলাম।  কিন্তু লাইন সামনে এগুচ্ছেই না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেলাম। কিছুক্ষন পর বুজতে পারলাম একেকজন এক সাথে ১০-১২ টা করে পাসপোর্ট নিয়ে বের হচ্ছে। যারা গ্রুপ ভিত্তিক এসেছিল তারা একসাথে জমা দিচ্ছিল। অবশেষে লাইনে প্রায় ঘন্টা দেরেক দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমাদের সিরিয়াল আসলো। গ্রুপের রানা ভাই আমাদের পাসপোর্ট একত্রে করে ভেতরে গেলেন। এর আগে জানতে পারলাম সবার কাছ থেকে ১০০ করে স্পীড মানি নিচ্ছে। এটা দিলে আর কিছুই না বলে সিল মেরে দেয় আর না দিলে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে একটু হয়রানি করে।

এখানে কাজ শেষ করে চলে গেলাম তামাবিল শুল্ক কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে দেখি বিশাল সিরিয়াল। সবাই পাসপোর্ট জমা দিয়ে রেখেছে টেবিলে। আমাদের সিরিয়াল আসতে আসতে মিনিনাম ২ ঘন্টা লাগবে। এই সুযোগে পাশেই হোটেলে জনপ্রতি দুপুরে ১০০ টাকা প্যাকেজে গরুর মাংস দিয়ে খেয়ে নিলাম। সাথে ভাত ও ডাল আনলিমিটেড। খাওয়া দাওয়া শেষে আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর দুপুর ১ টার দিকে ভারতের ইমিগ্রেশন অংশে প্রবেশ করলাম। সেখানে গিয়ে দেখি আরো বিশাল সিরিয়াল। পাসপোর্ট একসাথে করে ইমিগ্রেশন অফিসে জমা দিলাম। প্রায় ৩ ঘন্টা অপেক্ষা করে বিকাল ৪ টার দিকে ভারতে প্রবেশ করলাম।

১ম দিন:

ডাউকী বর্ডার থেকেই দরদাম করে জিপ ভাড়া করলাম। যেখানে ডাউকী থেকে শিলং পর্যন্ত ৩০০০-৩৫০০ টাকা ভাড়া সেখানে ৫০০০ টাকা দিয়ে জিপ ভাড়া করতে হলো। এক গাড়িতে রিলাক্সে ৮ জন বসা যায়। সামান্য চাপাচাপি করে বসলে ১০ জন বসা যায়। ছাড়াও ৪-৬ জনের জন্য ছোট মাইক্রোবাস রয়েছে। সেগুলোর ভাড়াও তুলনামূলকভাবে কম। মূলত ঈদের ছুটিতে বাংলাদেশ থেকে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে ওরাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও এটা অনৈতিক কাজ। তবে যারা আগে থেকেই ফোনে বুকিং দিয়ে রেখেছিল তারা ৩০০০-৩৫০০ টাকায়ই যেতে পেরেছে।আমাদের প্লান ছিল শিলং যাওয়ার পথে উমক্রেম ফলস, বরহিল ঝর্ণা, মওলিন ভিলেজ (এশিয়ার পরিচ্ছন গ্রাম)। কিন্তু ইমিগ্রেশনে দেরি হয়ে যাওয়ার কারনে এই প্লান টুটালি বাদ দেওয়া লাগছে। আমরা ডাউকী বাজার থেকে টাকা থেকে রুপি কনভার্ট করে নিলাম। (১০০ টাকা= ৭৮ রুপি রেট পেলাম) ।

এবার সরাসরি শিলং এর উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হলো আমাদের। আগেই বলেছি সময় স্বল্পতার কারনে আজকের দিনের স্পট গুলো দেখা বাধ্য হয়েই বাদ দিতে হয়েছে। যতই এগুচ্ছিলাম রাস্তার দুই পাশের বিশাল উচু উচু পাহাড়, পাইন গাছের বন, আর ছোট বড় অসংখ্য ঝর্ণা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। কিছুক্ষন পর পর মেঘ এসে রাস্তা ঢেকে দিচ্ছিল। রাস্তায় কয়েকটা ভিউ পয়েন্টে নেমে সবাই ছবি তুল্লাম। মেঘের ভেতর দিয়ে আমাদের গাড়ি চলতে চলতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টেরই পেলাম না। সন্ধার কিছুক্ষন পরই শিলং শহর পৌছে গেল। রাস্তা গুলো অনেক সুন্দর। সন্ধ্যার দিকে শহরে মোটামুটি ভিড় থাকে, এছাড়াও  ট্র্যাফিকও থাকে প্রচুর। যদিও আমাদের দেশের মত না। সবাই নিয়ম মেনে গাড়ী চালানো ও যত্রতত্র পার্কিং না করার কারনে জ্যাম বেশিক্ষন স্থায়ী হয়না।

Dawki
Road-to-Shillong
Road-to-Shillong

তখন শিলং শহরে রাতের বেলা কারর্ফিউ চলতেছিল। রাত ৮ টার পর দোকান পাট বন্ধ করে দিতে হয়। এসময় হোটেলের বাহিরে যাওয়া যাবেনা। তাই রাতের বেলা আর বাহিরে যাওয়া হল না। আমরা শহরেই একটা হোটেলে বুকিং দিলাম। ৯ জনের দুই রুম নিলাম ৪৬০০ রুপি দিয়ে। এক রুমে বড় ডাবল দুই বেড অন্য রুমে সিংগেল ৫ বেড। রুমে ডুকে ফ্রেস হয়ে হোটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার দিলাম। রুম সার্ভিস! অর্ডার দিলে রুমে এসে দিয়ে যায়। রুটি, ভাত, ও কয়েক প্রকার সবজি অর্ডার করলাম। একটু পর রুমে এসে খাবার দিয়ে গেলে আমরা একসাথে রাতের ডিনার সেরে ফেলি।  এখানে খাবারের ব্যাপারে একটু কষ্ট করা লাগে। যা ইচ্ছা খাওয়া যায়না। হালাল হারামের একটা বিষয় থাকে। তাই একটু সতর্ক থেকে অর্ডার করতে হয়। এদিকে সারাদিন মোবাইল সংযোগ বিচ্ছন্ন ছিলাম । হোটেলে ওয়াইফাই ছিল কিন্তু সমস্যা করছিল বার বার। সবাই একটু আড্ডা দিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। এভাবেই আমরা ১ম দিন পার করলাম।

২য় দিন

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে রুমেই ফজরের সালাত আদায় করে নিলাম। জানাল দিয়ে শিলং শহরের ভিউটা দারুন লাগছিল। ভোর বেলা ফাকা রাস্তা ঘাট। সকাল ৭ টা নাগাদ আমরা সবাই ফ্রেশ হয়ে হোটেল থেকে চেক আউট করে বের হয়ে পরলাম। আজকের দিনের প্লান শিলং এর গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পট গুলা দেখা।

বাহিরে এসে দেখি এখনো দোকানপাট খুলে নি। তাই সিদ্বান্ত নিলাম চেরাপুঞ্জি গিয়ে নাস্তা করবো। আমরা শহর থেকে দরদাম করে একটা জিপ ঠিক করে নিলাম। আমাদের শিলং এর স্পটগুলো দেখিয়ে ডাউকী ড্রপ করে আসবে। শুধু স্পট গুলো দেখিয়ে শিলং ড্রপ করলে ৩০০০ টাকা আর ডাউকী ড্রপ করলে ৬০০০ টাকা চাইলো। অবশেষে আমরা ৫৫০০ টাকায় একটা জীপ ঠিক করলাম। সামনে ড্রাইভারের সাথে দুইজন ও পেছনের দুই সিরিয়ালে ৩/৪ জন করে মোট ৮-১০ জন বসা যায়। ৮ জনের জন্য রিলাক্স। ১০ জন একটু চাপাচাপি হয়ে যায়।

ড্রাইভার বাংলা বেশি বুঝে না। আমাদের সাথের টুরমেট ওপেল ও রানা ভাই হিন্দিতে ড্রাইভারের সাথে কথা বলে গাড়ি ঠিক করলো। শিলং এর রাস্তার পাশের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা প্রথমেই পৌছে গেলাম এলিফেন্ট ফলসে। এখানে জনপ্রতি সম্ভবত টিকেট ১০ রুপি, ক্যামেরার জন্য ২০ রুপি ও গাড়ি পার্কিং এর ২০/৫০ রুপি । ৯ জনে টোটাল ২১০ রুপি নিয়েছিল। সামান্য সিড়ি বেয়ে নেমে দেখি সুন্দর একটা ঝরণা। যদিও এখানে মোট ৩ টা ঝরনা। বাকী দুইটা আরেকটু নিচে নেমে দেখা লাগে

বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে ছবি তুলে উপরে উঠে চিপস,পানি ও বিস্কিট দকিয়ে হাল্কা নাস্তা সেরে নিলাম। এর পরই আমরা রওনা দিলাম Nohkalikai Falls এর উদ্দেশ্যে। কখনো মেঘের ভেতর আবার কখনো উচু পাহারের মাজখান দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে চলতে চলতে ঝড়নার কাছে পৌছে গেলাম। Nohkalikai Falls অনেকেই উচ্চারণ করতে না পেরে বলে নোয়াখালি ফলস। খাসী ভাষায় এর নাম “” Jump of Ka Likai “” Ka likai নামের এক মহিলা দ্বিতীয়বার বিয়ে করে কিন্তু প্রথম স্বামীর সন্তানকে বেশী আদর করে বলে তার দ্বিতীয় স্বামী সেই সন্তানকে কেটে টুকরো টুকরো করে সব ফেলে দিয়ে মাংশটাই শুধু রান্না করে রাখে আর ka likai বাইরে থেকে এসে মাংশ খেয়ে ফেলে পরে বুঝতে পারে তার সন্তানকে তার দ্বিতীয় স্বামী মেরে ফেলেছে এবং মাংশ রান্না করে রেখেছিলো …এতে সে রাগে তার দ্বিতীয় স্বামীকে হত্যা করে এবং পাগল হয়ে এই ঝরনার উপর থেকে লাফ দিয়ে মারা যায় তখন এ ঝরনার নাম তার নামে রাখা হয় ।।

Hotel Window View
Elephant Falls
Nohkalikai Falls

ঝরনাটা এতই উচু যে পানি উপর থেকে পড়তে পড়তে অর্ধেক জলীয় বাষ্প হয়ে যায় আর ক্ষণে ক্ষণে মেঘ এসে চারপাশ ঢেকে দেয়। আমরা যাওয়ার সময় মেঘ না থাকায় ক্লিয়ার ভিউ দেখতে পেয়েছিলাম এর ক্ষনিক বাদেই মেঘ এসে ঢেকে দিয়েছিল ঝরণাটাকে। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় অনেক্ষন। এত উচু ঝর্ণা দেখে সত্যি অন্যরকম একটা শিহরণ জাগে শরিরে। এর পর কাছেই ছোট মার্কেট থেকে পাহাড়ি মিষ্টি কলা, আলু বোখারা ফল খেয়ে আবার গাড়িতে উঠে পড়লাম।

দুই পাশে অপার সৌন্দর্যে ভরা রাস্তা দিয়ে আবারো গাড়ি চলতে লাগলো। ছবিতে স্কটল্যান্ডের যেমন বিশাল সবুজ ভূমি ও পাহাড় দেখছিলাম ভিউটা অনেকটা এমনই মনে হচ্ছিল। দেখতে দেখতে চলে গেলাম চেরাপুঞ্জি সেভেন সিস্টারস ফলস এর কাছে। পাশাপাশি সাতটি ঝরনা। সেজন্য এর নাম সেভেন সিস্টার ঝরনা। কেউ কেউ বলেন, ভারতের সাতটি রাজ্যের পানি এসে মিশেছে এ ঝরনার সঙ্গে। তাই এর নাম সেভেন সিস্টার। অনন্য সুন্দর এ ঝরনা দেখি মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে চেরাপুঞ্জির দূরত্ব প্রায় ৫৬ কিলোমিটার। পৃথীবির সর্বাধিক বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। বাংলাদেশ থেকে সোজাসোজি এর দুরত্ব কুড়ি কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৪,৮৬৯ ফুট। এটি পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার অংশ। চেরাপুঞ্জির আগের নাম ছিল সোহরা। স্থানীয় ভাষায় সোহরা অর্থ চূড়া। কারণ এলাকাটির অবস্থান পাহাড়ের চূড়ায়। পরে নাম রাখা হয় চেরাপুঞ্জি। চেরাপুঞ্জি অর্থ কমলালেবুর দ্বীপ। কারণ এখানে কমলালেবুর চাষ বেশি হয়। কমলা ছাড়া এখানে পান-সুপারিও চাষ হয়। অবশ্য চেরাপুঞ্জি বেশি পরিচিত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের অঞ্চল হিসেবে। চেরাপুঞ্জি একসময় মেঘালয়ের রাজধানী ছিল। ১৮৬৪ সালে চেরাপুঞ্জি থেকে শিলংয়ে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়।

Cherrapunji Seven Sisters
Cherrapunji Trails
Cherrapunji to Shillong

সময় তখন দুপুর ১১ টার মত। ভিউ পয়েন্ট থেকে সেভেন সিস্টার্স ঝর্ণা দেখলাম।।যদিও প্রথম মেঘে ডাকা ছিল পুরোটাই। একটু পর মেঘ সরে গেলে দেখতে পারি ভালভাবে। পাশেই একটা চমৎকার ঝিরি ছিল। সেখানে বেশ কিসুক্ষন বসে থাকলাম, ছবি তুললাম।। দেখতে দেখতে প্রায় ১২ টা বেজে গেল। এখানেই একটি পার্ক ও মৌসুমি গুহা রয়েছে। যদিও অই দুইটায় যাইনি। ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় পাশেই একটি রেস্টুরেন্টে সবজি, মাছ, বেগুন ভাজি দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিলাম।।

এবার আবার শিলং শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আসার পথে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থানে জিপ ব্রেক করিয়ে ছবি তুলে নিলাম। আমাদের কয়েজন মার্কেটিং করবে তাই যাওয়া। শিলং শহরে ঘন্টা খানিক সময় কাটিয়ে বিকেল ৩ টা ৩০ এর দিকে ডাউকী উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।  যাওয়ার পথে আবারো সেই চোখ ধাঁধানো মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ।

About Sajedul Haque

Hi, I’m Sajedul HaqueNomadic Marketer and passionate Traveler. I blend my love for exploring new places with my expertise in Making Videos, SEO and affiliate marketing, working remotely from different corners of the world.

Leave a Comment