শিলং (Shillong) শহর থেকে এবার আমাদের গাড়ি ছুটে চললো স্বচ্ছ জলের গ্রাম হিসেবে খ্যাত ডাউকির (Dawki) সোনাংপেডেং (Shnongpdeng) এর উদ্দেশ্যে। ডাউকি হল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড় জেলায় অবস্থিত একটি শহর। সন্ধার মধ্যে ডাউকী বাজার পৌছে গেলাম। আমাদের কয়েকজনের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল সোনাংপেডাং উমাংগট নদীর (Umngot River) তীরে রাতে ক্যাম্পিং করবো। অন্য গ্রুপ ক্লান্ত থাকায় ডাউকী বাজারেই একটি গেস্ট হাউজে উঠে গেল। ৩ জনের সাধারন মানের রুম ৮০০ টাকা করে। দুই রুম নিয়ে ৬ জন থেকে গেল। আর আমরা অন্য তিন জন একটি জিপ ভাড়া করে রওনা দিলাম সোনাংপেদাং এর উদ্দেশ্যে। দরদাম করে ৩০০ রুপি দিয়ে জিপ নিলাম। ড্রাইভার এর চালানোর স্টাইল দেখে কিছুটা সন্দেহ হলো। মনে হচ্ছিল এ বেটা তো ড্রাইভার না। কিছুক্ষন পর জিপ থামিয়ে দেখি মোবাইলে জিপি সিম প্রবেশ করাচ্ছে।
তখন অনুমান করলাম হয়ত কোন অবৈধ ব্যবসা আছে। পরে অবশ্য স্বীকার করেছে সে ড্রাইভার না। তাঁর অন্য ব্যবসা আছে। পাহাড়ি আকা বাকা রাস্তায় চলতে চলতে ৪০-৪৫ মিনিটের মধ্যেই পৌছে গেলাম। তখন রাত ৮ টা। ওখানে উমাংগট নদীর উপর স্থাপিত ঝুলন্ত ব্রীজ পার হয়ে ক্যাম্পিং সাইটে গেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি একদম ফাঁকা অর্থাৎ কেউ নেই। আবার ফিরে আসলাম ব্রীজের এপার রিসোর্ট গুলোর কাছে। সেখানে খোজ নিয়ে একটা কটেজের মালিককে পেয়ে গেলাম। ওনার সব কটেজ বুকিং। শুধু মাত্র দুইটা তাবু ফাঁকা আছে। তো দরদাম করে ৭০০ টাকা দিয়ে ৩ জনের জন্য দুইটা টেন্ট ভাড়া নিলাম। আমাদেরকে রিসোর্ট এর মালিক টয়লেট ও ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলো।
Previous Nextএকটু বেশিই ক্ষুধার্ত ছিলাম। ডাউকি বাজার থেকে সাথে করে মুড়ি ও চানাচুর নিয়ে এসেছিলাম এই ভেবে “যদি কিছু না পাই”। রিসোর্ট এর মালিককে হালাল খাবার এর কথা জিজ্ঞেস করতেই একটা রেস্টুরেন্টের নাম বললো। কিন্তু সেখানে পায়ে হেটে যেতে লাগবে ১০-১৫ মিনিট। শরীরে এনার্জি ছিল না। তখন ওনি জানালেন যে খাবার রুম ডেলিভারির সিস্টেম আছে। রেস্টুরেন্টে ফোন দিয়ে আমাদের কথা বলিয়ে দিলেন আর ওবার কাছে থালা খাবার মেনু দিলেন। আমাদের টেন্টের মালিক খুব ভাল ইংরেজি বলতে পারে। ইংরেজি কিংবা বাংলা হলে কথা বলতে আমার সুবিধে হয়। হিন্দি বলতেও পারিনা আবার বুঝিও খুব কম। লোক্টা খুব আন্তরিক ছিল। রাতের ডিনারের জন্য এগ ফ্রাইড রাইস + প্রন মাসালা অর্ডার করলাম। ২০-২৫ মিনিট পর এসে খাবার দিয়ে গেল। খাওয়া দাওয়া সেরে বারান্দায় বেশ কিসুক্ষন বসে ছিলাম। উমাংগট নদীর বয়ে যাওয়া পানির স্রোত মন ভরে দিচ্ছিল। ৩ জন জমিয়ে আড্ডা দিয়ে টেন্টের ভেতর ঘুমিয়ে পড়লাম।
আজ আমাদের মেঘালয় ভ্রমণের ৩য় দিন। ভোর ৪ টায় পাহাড়ি মোরগের ডাকে ঘুম ভেংগে গেল। উঠে ফ্রেস হয়ে মুড়ি চানাচুর খেয়ে চলে গেলাম উমাংগট নদীতে। পাথরের পর পাথর হেটে বয়ে যাওয়া স্রোতের কাছাকাছি গিয়ে ফটোসেশন শেষ করে বড় একটা পাথরের উপরের বসে এক অপার্থিব সুখ অনুভব করতে লাগলাম। অনেকক্ষন এভাবে বসে থাকলাম। আহ! এই অনুভূতি লিখে বুঝানো সম্ভব না। এখানে রাতে না থাকলে ভোর বেলার এই সুখ অনুভব করা সম্ভব হতো না। এর পর আবার তাবুতে ফিরে গেলাম। আমাদের গ্রুপের অন্যদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ৭ টা ৩০ এর দিকে ওনারা এখানে পৌছে গেলান আর ওনাদের দেখা শেষ হলে আমরা ভাড়া করা জীপে করে রওনা দেই ক্রাংসুরি ঝরনা দেখতে। এবার আমরা দুইজন ছাদে উঠে পড়লাম। ছাদ থেকে চারপাশের ভিউ অনেক সুন্দর লাগে। আমাদের গাড়ি চলতে থাকে ক্রানসুরি ঝরণার দিকে।